দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮
(ধারা ২; লেকচার ভার্সনঃ ০১)
আইনের ভাষ্য
আইনের কোথাও অন্য কিছু না বলা থাকলে, দেওয়ানী কার্যবিধির বিভিন্ন শব্দের মানে নিচের মতো করে বোঝানো হয়েছে:
১। বিধি (Code)
“বিধি” শব্দটি ব্যবহার করা হলে, সেখানে “নিয়ম” শব্দটিও বোঝানো হয়। মানে, যেসব নিয়ম-কানুন আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তৈরি, সেগুলোও ‘বিধি’ হিসেবে ধরা হয়।
২। ডিক্রি (Decree)
ডিক্রি বলতে বোঝায় আদালতের এমন একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, যা কোনো দেওয়ানী মোকদ্দমায় পক্ষদ্বয়ের অধিকার স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করে। এটি হয় প্রাথমিক (Preliminary), নয়তো চূড়ান্ত (Final) হতে পারে।
- কোনো আরজি (মোকদ্দমার দরখাস্ত) যদি বাতিল হয়, কিংবা সেকশন ১৪৪–এর মতো কিছু বিষয় আদালত নির্ধারণ করে—তাও ডিক্রির মধ্যে পড়ে।
কিন্তু নিচের বিষয়গুলো ডিক্রি নয়ঃ
- যে আদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল করা যায়;
- নিয়ম না মানার কারণে মোকদ্দমা খারিজ।
ব্যাখ্যাঃ যদি মোকদ্দমার পুরো নিষ্পত্তি তখনই না হয়, তবে ডিক্রিটিকে প্রাথমিক বলা হয়। আর যখন মোকদ্দমার পুরো বিষয় চূড়ান্তভাবে নিষ্পন্ন হয়, তখন সেটা চূড়ান্ত ডিক্রি।
- এমনও হতে পারে—একটি ডিক্রির কিছু অংশ প্রাথমিক, কিছু অংশ চূড়ান্ত।
৩। ডিক্রিদার (Decree-holder)
যার পক্ষে আদালত ডিক্রি দেয়, তাকেই ডিক্রিদার বলে।
৪। জেলা (District)
জেলা বলতে বোঝানো হয় এমন একটি এলাকা, যেখানে কোনো প্রধান দেওয়ানী আদালত তার মূল ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এই সংজ্ঞার মধ্যে হাইকোর্টের অধীন মৌলিক দেওয়ানী এখতিয়ারের এলাকাও পড়ে।
৫। বিদেশী আদালত (Foreign Court)
যে আদালত বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত, এবং যার কোনো ক্ষমতা বাংলাদেশে নেই, বা যেটি বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা বা অনুমোদন করেনি—সেটি বিদেশী আদালত।
৬। বিদেশী রায় (Foreign Judgment)
বিদেশী আদালতের দেওয়া যে কোনো রায়কেই বিদেশী রায় বলা হয়।
৭। সরকারি উকিল (Government Pleader)
সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে যে উকিল নিযুক্ত থাকেন, তাকেই সরকারি উকিল বলা হয়। তার হয়ে অন্য যিনি কাজ করেন, তাকেও সরকারি উকিল হিসেবে ধরা হয়।
৮। বিচারক বা জজ (Judge)
যিনি দেওয়ানী মোকদ্দমার বিচার করেন, সেই মূল কর্মকর্তাই বিচারক।
৯। রায় (Judgment)
যে কারণ বা যুক্তির উপর ভিত্তি করে আদালত ডিক্রি বা আদেশ দেন, তাকেই রায় বলা হয়।
১০। সাব্যস্ত দেনাদার (Judgment-debtor)
যার বিরুদ্ধে আদালত ডিক্রি দেয় বা কোনো আদেশ কার্যকর করার আদেশ দেয়, তাকে সাব্যস্ত দেনাদার বলা হয়।
১১। বৈধ প্রতিনিধি (Legal Representative)
মৃত কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি যে উত্তরাধিকার বা প্রতিনিধি দেখভাল করেন, তাকেই বৈধ প্রতিনিধি বলা হয়। এমনকি সেই ব্যক্তিও এতে পড়েন যার কাছে ঐ সম্পত্তি যায় এবং যিনি মোকদ্দমা পরিচালনা করেন বা যার বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করা হয়।
১২। অন্তর্বর্তীকালীন মুনাফা (Mesne Profit)
এটি এমন এক ধরনের মুনাফা, যা কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে অন্যের সম্পত্তি ভোগ করে আয় করেছে, বা করতে পারত। এই মুনাফার সঙ্গে সুদও ধরা হয়। তবে, যদি কোনো উন্নয়ন করে আয় হয়, সেটা এই মুনাফার মধ্যে পড়ে না।
১৩। অস্থাবর সম্পত্তি (Movable Property)
যেমনঃ জমিতে জন্মানো ফসল ইত্যাদি। এগুলোকে এই আইনে অস্থাবর সম্পত্তি বলা হয়।
১৪। আদেশ (Order)
আদেশ হলো আদালতের দেওয়া এমন কোনো সিদ্ধান্ত, যা ডিক্রি নয় কিন্তু আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।
১৫। উকিল (Pleader)
যিনি অন্য কারো পক্ষ হয়ে আদালতে হাজির হয়ে কথা বলতে ও যুক্তি তুলে ধরতে পারেন।
১৬। নির্ধারিত (Prescribed)
আইনের নিয়ম অনুযায়ী যেসব কিছু নির্ধারিত হয়, সেগুলোকেই নির্ধারিত বলে।
১৭। সরকারি কর্মচারী (Public Officer)
নিচের যেকোনো ব্যক্তিকে সরকারি কর্মচারী বলা হয়ঃ
- বিচারক বা জজ।
- প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।
- সামরিক বাহিনীর গেজেটেড অফিসার।
- আদালতের এমন কর্মচারী যিনি তদন্ত, রিপোর্ট, কাগজপত্র তৈরি, আদেশ জারি, শৃঙ্খলা বজায় রাখেন।
- যিনি আইনের বলে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেন।
- যারা অপরাধ প্রতিরোধ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা বা অপরাধীর বিচার নিয়ে কাজ করেন।
- যারা সরকারের সম্পত্তি বা অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন।
- যাঁরা সরকারি কাজে নিযুক্ত এবং বেতন বা ফি পান।
১৮। নিয়মসমূহ (Rules)
প্রথম তফসিল বা ১২২ ও ১২৫ ধারার অধীনে প্রণীত যেসব নিয়ম বা ফরম রয়েছে, সেগুলোই এখানে বোঝানো হয়েছে।
১৯। কর্পোরেশনের শেয়ার (Share of Corporation)
শেয়ার, স্টক, ডিবেঞ্চার, ঋণপত্র, মুচলেকা—সবই কর্পোরেশনের শেয়ারের অন্তর্ভুক্ত।
২০। স্বাক্ষরিত (Signed)
রায় বা ডিক্রি ছাড়া অন্য যেকোনো নথি বা আদেশে “স্বাক্ষরিত” বলতে বোঝায় সেগুলোতে স্ট্যাম্প যুক্ত আছে।