Saturday , April 20 2024

অশালীন আচরণের শিকার? জেনে নিন কি করবেন?

‘অশালীন আচরণ’ শব্দের কোনোরূপ ব্যাখ্যা আইনের কোনো ধারাতেই সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে দন্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় এ সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়েছে মাত্র। ধারাটি হলো ‘কোনো নারীর শালীনতা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে আক্রমন ও তার প্রতি অপরাধমূলক বল প্রয়োগই হচ্ছে অশালীন আচরণ৷ সাধারণভাবে বলা যায়, আমাদের সামাজিক রীতিনীতি কিংবা আচার-আচরণের সঙ্গে মানানসই নয়, এমন যে কোনো ব্যবহার বা আচরণই অশালীন আচরণ। আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের সে ভয়াবহ চিত্র বিদ্যমান তাতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা কেউ ভাবে না। এমন কি আইনের সাহায্যে এর যে প্রতিকার পাওয়া যায় তা অনেকের কাছে অজানা। অথচ স্কুল-কলেজগামী ছাত্রী অথবা কর্মজীবী নারী যে কেউ প্রায়ই বখাটে পুরুষদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন। শুধু অশ্লীল উচ্চারণ বা শিস্ দেয়া নয় বরং এদের আচরণ জামা-কাপড় কিংবা শরীরে হাত দেয়া পর্যন্ত গড়ায়৷ গ্রামাঞ্চলে শুধু বখাটেদের উৎপাত কিশোরীদের স্কুল ত্যাগের বহু ঘটনা ঘটে এমনকি এরজন্য অনেকে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়।এর জলন্ত উদাহরণ গাইবান্ধার তৃষা, খুলনার রুমী, নারায়নগঞ্জের চারুকলার ছাত্রী সীমা এরকম নাম না জানা অনেকে।

দন্ডবিধি অনুসারে শাস্তিঃ দন্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৫০৯ ধারায় অশালীন আচরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। দন্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে বা শালীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে জেনেও উক্ত নারীকে আক্রমণ করে অথবা তার উপর অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে তবে সেই ব্যক্তি তার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।

আইনগত ব্যাখ্যাঃ নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপ্রায়ে বা তার শালীনতা নষ্ট হতে পারে জেনে কোন নারীকে আক্রমন করা বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করা এই ধারায় অপরাধ বলে গন্য করা হয়েছে এবং এর জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে দুই বছরের কারাদন্ড বা অর্থদন্ড অথবা উভয় প্রকার দন্ড।

অন্যদিকে দন্ডবিধির ৫০৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর শালীনতা অমর্যাদার উদ্দেশ্যে যদি কোনো ব্যক্তি কোনো উক্তি, অঙ্গভঙ্গি বা অন্য কোনো কাজ করে তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।

আইনগত ব্যাখ্যাঃ নারীর শালীনতা একটি মূল্যবান সম্পদ৷ শালীনতা ও সম্ভ্রমের হানিকর বা অমর্যাদার কোন উক্তি, মন্তব্য বা অঙ্গভঙ্গি দন্ডনীয়। বর্তমান ধারায় কোন নারীর শালীনতার ক্ষুন্নকারী কোন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি কার্যকে দন্ডনীয় বলে গণ্য করা হয়েছে। এই আপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এক বত্‍সরের কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয়বিধ দন্ড।

কিভাবে প্রতিকার পাওয়া যাবে?

এজাহার দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকারঃ এই ধরনের মামলা থানায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমে করতে হয়৷ আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার নিকটবর্তী থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে গিয়ে আপনার অভিযোগ সম্পর্কে বলুন।

আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকারঃ যদি কোন কারনে থানায় এজাহার দায়ের করা সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে আপনি অভিযোগ (আরজি) দাখিলের মাধ্যমে সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। এক্ষেত্রে শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে স্ত্রীলোককে আক্রমন করা বা তার প্রতি অপরাধজনক বলপ্রয়োগ করার জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট বা প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এবং নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কোন কথা বলা বা অঙ্গভঙ্গি করার জন্য যে কোন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে (যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সে এলাকার এখতিয়ারাধীন আদালতে) মামলা দায়ের করতে পারেন।

আদালতে কি কি বিষয় প্রমাণ করতে হবে?

এই ধরনের অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে নিম্নোক্ত বিয়য়গুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷ বিষয়গুলো হলোঃ

১. যিনি আহত হয়েছেন, তিনি একজন নারী;

২. অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে আক্রমণ করেছিলেন বা

৩. তার ওপর বল প্রয়োগ করেছিলেন বা

৪. অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে লক্ষ্য করে অর্থাত্‍ তাকে শোনানোর জন্য বা দেখানোর জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করেছিলেন-

  • কোনো মন্তব্য করেছিলেন বা কোনো বিশ্রী শব্দ করেছিলেন বা
  • কোনো অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন বা
  • কোনো বস্তু প্রদর্শন করেছিলেন অথবা
  • কোনো নারীর নিভৃতবাসে অনধিকার প্রবেশ করেছিলেন বা

৫. এইসব কাজের দ্বারা তিনি কোনো নারীর শালীনতার অমর্যাদা করতে চেয়েছিলেন বা

৬. নির্যাতিত মহিলার শালীনতা ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে বা সজ্ঞানে তিনি ঐ আচরণ করেছিলেন।

উপরোক্ত বিষয়গুলো আদালতকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণ করে দেখাতে না পারলে মামলা অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে যায় এবং আসামীরা ছাড়া পেয়ে যায়। এজন্য এ ব্যাপারে সবাইকে মনোযোগী হতে হবে।

নারীরা এখন আর ঘরের মধ্যে আবদ্ধ নয়৷ অধিক সংখ্যক নারী ঘরের কাজের সাথে সাথে বাইরের কাজের সাথেও সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ছেন। পড়াশোনা, জীবিকা, সামাজিক অথবা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীর সফল পদচারনা৷ তাই কেউ নারীর প্রতি অশালীন আচরণ করলে তার ওপর আইনের যথোপযুক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে তা দমন করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

[yottie id=”12″]

Check Also

আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার প্রন্তুতির জন্য দেওয়ানী কার্যবিধির ভাষ্য

দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা-১৪ (আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার প্রন্তুতি)

আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার প্রন্তুতির জন্য দেওয়ানী কার্যবিধির ভাষ্য

দেওয়ানী কার্যবিধির ধারা-১৩ (আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার প্রন্তুতি)