অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবশিষ্টাংশভোগীদের মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে অধিকার
অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবশিষ্টাংশভোগীদের মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে অধিকার
অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবশিষ্টাংশভোগীদের মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে অধিকারের তালিকাঃ
(১) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার পুত্রের অধিকারঃ মৃত ব্যক্তির নিম্নগামী পুত্র কোন কন্যা না থাকলে পুত্র সম্পূর্ণ অংশ পাবে; একাধিক পুত্র থাকলে সবাই সমান ভাগ পাবে। পুত্রের সাথে কন্যা থাকলে কন্যা পুত্রের সাথে অবশিষ্টাংশভোগীতে পরিণত হয় এবং পুত্র কন্যার দিগুণ সম্পত্তি পায়।
(২) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পুত্রের পুত্র (যতই নিম্নগামী হোক) এর অধিকারঃ
(ক) নিকটতম পুত্র থাকলে দূরবর্তী পুত্র বাদ যাবে।
(খ) দুই বা ততোধিক পুত্রের পুত্র সমানাংশে উত্তরাধিকার লাভ করে।
(গ) পুত্রের কন্যা পুত্রের পুত্রের সাথে অবশিষ্টাংশভোগীতে পরিণত হয় এবং পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যার দ্বিগুণ পায়।
উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, নিকটবর্তী পুত্রের বর্তমানে দূরবর্তী পুত্রের পুত্র সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। একই নীতি দূরবর্তী কন্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাত্ পুত্রের বর্তমানে মৃত পুত্রের পুত্র বা কন্যা সম্পত্তি থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হবে। এক বা একাধিক কন্যার বর্তমানে ও মৃত পুত্রের সন্তানরা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে আংশিক বা সম্পূর্ণরুপে বঞ্চিত হয়। নীচের উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিস্কারভাবে বোঝা যাবে।
মনে করি, এক ব্যক্তি পিতা, মাতা, ২ কন্যা ও পূর্বে মৃত পুত্রের কন্যা রেখে মারা যায়। মূল মুসলিম আইনানুযায়ী তাদের সম্পত্তি বন্টন নিম্নরূপ হবেঃ
পিতাঃ ১/৬ (অংশীদার হিসেবে)
মাতাঃ ১/৬ (অংশীদার হিসেবে)
২ কন্যাঃ ২/৩(অংশীদার হিসেবে)
পুত্রের কন্যাঃ (সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত)
মুসলিম আইনের এই বিধান ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ এর ৪নং ধারার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে যা মুসলিম আইনের মূলনীতিসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৬১ সনের ১৫ ই জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া এই আইনের মর্ম মতে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করবার সময় ঐ মৃত পুত্র বা কন্যার সন্তান যদি কেউ থাকে, তবে ঐ মৃত পুত্র বা কন্যা জীবিত থাকলে যে পরিমাণ সম্পত্তি লাভ করত, তার সমান অংশ ঐ মৃত পুত্র বা কন্যার সন্তানরা লাভ করবে।
উদাহরণঃ
পিতাঃ ১/৬
মাতাঃ ১/৬
২ কন্যাঃ ২/৩ এর ১/২ = ১/৩ (অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে)
পুত্রের কন্যাঃ ২/৩ এর ১/২ = ১/৩ (অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে)
অর্থ্যাৎ পুত্র জীবিত থাকলে ২ কন্যা অংশীদার হিসেবে না পেয়ে পুত্রের সাথে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পাবে।
কন্যা এক পুত্রের সমান সম্পত্তি লাভ করতো। পিতা ও মাতা অংশীদার হিসেবে (১/৬ +১/৬) = ১/৩ অংশ পেয়েছেন। বাকী ২/৩ অংশ সম্পত্তির ১/২ অংশ করে পেয়েছে ২ কন্যা একত্রে ও এক পুত্র।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার উধ্বগামী (পিতা, পিতার পিতা) এর অধিকারঃ
পিতাঃ সন্তান বা পুত্রের সন্তান, যত নীচেরই হোক, না থাকলে পিতা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে সমস্ত অবশিষ্টাংশ পাবেন।
পিতার পিতা, যত উপরে হোকঃ সন্তান বা পুত্রের সন্তান, যত নীচের হোক না থাকলে পিতার অবর্তমানে নিকটতম পিতার পিতা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে সমস্ত অবশিষ্টাংশ পাবেন। নিকটতম পিতার পিতার বর্তমানে দূরবর্তী পিতার পিতা বাদ যাবেন।
মৃত ব্যক্তির পিতার উধ্বগামীঃ
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পূর্ণ বা আপন ভাইয়ের অধিকারঃ পূর্ণ বা আপন বোন না থাকলে পূর্ণ ভাই সমস্ত অবশিষ্টাংশ পায়। একাধিক ভাই থাকলে প্রত্যেকে সমানাংশে পায়। ভাইয়ের সাথে পূর্ণ বা আপন বোন থাকলে বোন অংশীদার হিসেবে না পেয়ে ভাইয়ের সাথে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে সম্পত্তি পায়। ভাই বোনের দ্বিগুণ পায় ।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পূর্ণ বোন বা আপন বোনের অধিকারঃ পূর্ণ ভাই এবং উপরে উল্লেখিত অন্যান্য অবশিষ্টাংশভোগী না থাকলে পূর্ণ বোন অবশিষ্টাংশ ভোগীতে পরিণত হবে যদি মৃত ব্যক্তির-
ক) এক বা একাধিক কন্যা অথবা
খ) পুত্রের এক বা একাধিক কন্যা, যত নীচের হোক অথবা এমনকি
গ) শুধুমাত্র এক কন্যা এবং পুত্রের কন্যা বা কন্যাগণ, যত নীচের হোক, থাকে।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে বৈমাত্রেয় ভাই (যেখানে পিতা একজন কিন্তু মাতা দুইজন তাদের সন্তানগণ) এর অধিকারঃ বৈমাত্রেয় ভাই বৈমাত্রেয় বৈমাত্রেয় বোনের সাথে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে সম্পত্তি পায়। ভাই বোনের দ্বিগুণ পায়।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে বৈমাত্রেয় বোনের অধিকারঃ বৈমাত্রেয় ভাইসহ উপরে উল্লেখিত অন্যান্য অবশিষ্টাংশভোগীরা না থাকলে বৈমাত্রেয় বোন অবশিষ্টাংভোগী হিসেবে সম্পত্তি লাভ করে, যদি মৃতব্যক্তির-
(ক) এক কন্যা অথবা
(খ) পুত্রের কন্যা বা কন্যারা যত নীচেই হোক অথবা এমনকি
গ) এক কন্যা ও এক পুত্রের কন্যা বা কন্যারা যত নীচেই হোক, থাকে।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পূর্ণ বা আপন ভাইয়ের পুত্র বা পুত্রগণের অধিকার।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে বৈমাত্রেয় ভাইয়ের পুত্র বা পুত্রগণ।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পূর্ণ বা আপন ভাইয়ের পুত্রের পুত্রের অধিকার।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে বৈমাত্রেয় ভাইয়ের পুত্রের পুত্র।
এভাবে আপন ভাইয়ের পুত্রের পুত্রের পুত্র। বৈমাত্রেয় ভাইয়ের পুত্রের পুত্রের পুত্র পরপর পুরুষ ধারার ভিত্তিতে চলবে।
প্রকৃত পিতামহের নিম্নগামী অর্থাত্ পিতার পিতাঃ
মৃত ব্যক্তির পূর্ণ চাচা বা আপন চাচার অধিকার
স্বগোত্রীয় রক্ত সম্পর্কীয় চাচা
পূর্ণ বা আপন চাচার পুত্র
রক্ত সম্পর্কীয় চাচার পুত্র
পূর্ণ চাচার পুত্রের পুত্র
রক্ত সম্পর্কীয় চাচার পুত্রের পুত্র।
অবশিষ্টাংশভোগীদের মধ্যে সম্পত্তির অংশ বন্টনঃ যেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির কেবলমাত্র অবশিষ্টাংশভোগীগণই বৈধ উত্তরাধিকারী থাকে, সেক্ষেত্রে সমস্ত সম্পত্তি তাদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। উদাহরণ দ্বারা বিষয়টি পরিস্কার বোঝা যাবে।
উদাহরণ-১
একজন সুন্নী মুসলমান স্ত্রীলোক তার স্বামী, মাতা, পুত্র এবং কন্যাকে রেখে মারা যান৷ এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির অংশীদার এবং অবশিষ্টাংশভোগী সব ধরনের ওয়ারিশ আছেন৷ তাদের স্বাভাবিক অংশ নিম্নরুপঃ
স্বামী = ১/৪ (অংশীদার)
মাতা = ১/৬ (অংশীদার )
পুত্র ও কন্যা অবশিষ্টাংশভোগী
স্বামী এবং মাতাকে তাদের অংশ দেবার পর ১- (১/৪ +১/৬) = ১-৫/১২ = ৭/১২ অংশ থাকে৷
এই ৭/১২ অংশই পুত্র এবং কন্যার মাঝে ২:১ অনুপাতে বন্টন করতে হবে৷ অর্থাত্ পুত্র ২/৩ এব কন্যা ১/৩ অংশ পেত, যদি সম্পত্তির পরিমাণ ৩ হতো৷ কিন্তু অবশিষ্টাংশ হলো ৭/১২৷ তাই পুত্র পাবে ৭/১২ এর ২/৩ এবং কন্যা ৭/১২ এর ১/৩ অংশ৷ কাজেই তাদের চূড়ান্ত অংশ নিম্নরুপঃ
স্বামী = ১/৪ বা ৯/৩৬
মাতা = ১/৬ বা ৬/৩৬
পুত্র = ৭/১২ এর ২/৩ = ১৪/৩৬
কন্যা = ৭/১২ এর ১/৩ = ৭/৩৬
৯/৩৬ + ৬/৩৬ + ১৪/৩৬+৭/৩৬ =৩৬/৩৬ = ১
উদাহরণ-২
ক) পুত্র থাকলে কন্যা অংশীদার হিসেবে সম্পত্তির অংশ লাভ করতে পারেনা৷ কিন্তু উত্তরাধিকারীদের মাঝে একজন কন্যা ও একজন পুত্রের পুত্র হলে কন্যা অংশীদার হিসেবে ১/২ অংশ পাবে এবং পুত্রের পুত্র অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী ১/২ অংশ পাবে৷
২ পুত্র ৪/৭ (অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে প্রত্যেক পুত্রের অংশ ২/৭)
৩ কন্যা ৩/৭ (অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে প্রত্যেক কন্যার অংশ ১/৭)
খ) বিধবা ১/৮ (অংশীদার হিসেবে)
পুত্র ৭/৮ এর ২/৩ = ৭/১২ (অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে)
কন্যা ৭/৮ এর ১/৩ = ৩/২৪
বিধবার অংশ পরিশোধের পর অবশিষ্টাংশটি হলো ৭/৮৷
উদাহরণ-৩
একজন সুন্নী মুসলমান এক পিতা, এক মাতা ও কন্যা রেখে মৃত্যুবরণ করলে নিম্নভাবে তার সম্পত্তি বন্টিত হবেঃ
কন্যা-১/২
মাতা ১/২ এর ১/৬ অংশ= ১/১২
পিতা (বাকি ১-১/১২=) ১১/১২ অংশ
এখানে পিতা একইসঙ্গে অংশীদার ও অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পাচ্ছেন৷ তিনি অংশীদার হিসেবে অংশ পাচ্ছেন, কারণ একজন কন্যা আছে এবং অবশিষ্টাংভোগী তিনি সম্পত্তির বাকী ১১/১২ অংশ পাচ্ছেন।