Saturday , August 9 2025

Section 13. When foreign judgement not conclusive | বিদেশী রায় কখন চূড়ান্ত নয়

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮

(১৯০৮ সালের ৫নং আইন)

দায়িত্ব অব্যাহতি (Disclaimer): এটি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণমূলক উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে প্রদত্ত সকল তথ্য, দৃষ্টান্ত ও উপাত্ত বিজ্ঞ আইনজীবীদের পেশাগত পরামর্শের বিকল্প নয়।
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর সূচীপত্রে ফিরে যান।

ধারার ইংরেজী ভার্সনঃ

Section 13. When foreign judgement not conclusive:
A foreign judgement shall be conclusive as to any matter thereby directly adjudicated upon between the same parties or between parties under whom they or any of them claim litigating under the same title except-
(a) where it has not been pronounced by a Court of competent jurisdiction;
(b) where it has not been given on the merits of the case;
(c) where it appears on the face of the proceedings to be founded on an incorrect view of international law or a refusal to recognise the law of Bangladesh in cases in which such law is applicable;
(d) where the proceedings in which the judgement was obtained are opposed to natural justice;
(e) where it has been obtained by fraud;
(f) where it sustains a claim founded on a breach of any law in force in Bangladesh.

ধারার বাংলা ভার্সনঃ

ধারা ১৩। বিদেশী রায় কখন চূড়ান্ত নয়ঃ
কোন বিদেশী আদালত কোন বিষয়ে বিচার করলে ও তা একই পক্ষসমূহ বা তাদের সূত্রে এক বা একের অধিক স্বত্ব দাবিকারীর মধ্যে একই বিষয় সম্পর্কিত মোকদ্দমা হলে বিদেশী আদালত এর রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে; তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত—
(এ) যেক্ষেত্রে উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক রায় ঘোষিত হয় নাই;
(বি) মোকদ্দমার গুণাগুণ এর ভিত্তিতে রায় দেওয়া না হলে;
(সি) আন্তর্জাতিক আইনের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা কিংবা মোকদ্দমাটির প্রতি প্রযোজ্য বাংলাদেশের আইন অস্বীকার করে রায় প্রদান করা হয়েছে বলে কার্যক্রম হতে প্রতীয়মান হলে;
(ডি) যে রায় আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে, তাতে অনুসৃত পদ্ধতি ও কার্যক্রম ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হলে;
(ই) প্রতারণা মারফত রায় লাভ করা হলে;
(এফ) বাংলাদেশে প্রচলিত কোন আইনের বিরোধী কোন দাবি রায়ে বজায় রাখা হলে।

বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা

ধারা ১৩ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান যা বিদেশী আদালতের রায় (Foreign Judgments) এর কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করে। সাধারণত, একটি বিদেশী আদালত যদি কোনো বিষয়ে রায় দেয় এবং সেই বিষয়টি একই পক্ষগুলোর মধ্যেকার হয়, তাহলে সেই রায়কে চূড়ান্ত (Conclusive) বলে ধরা হয়। এর মানে হলো, বাংলাদেশে সেই একই বিষয় নিয়ে নতুন করে মোকদ্দমা করা যাবে না। তবে, এই ধারায় কিছু ব্যতিক্রম বলা হয়েছে, অর্থাৎ কিছু সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বিদেশী আদালতের রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না।
ধারাটির মূল অংশটি হলোঃ
“কোন বিদেশী আদালত কোন বিষয়ে বিচার করলে ও তা একই পক্ষসমূহ বা তাদের সূত্রে এক বা একের অধিক স্বত্ব দাবিকারীর মধ্যে একই বিষয় সম্পর্কিত মোকদ্দমা হলে বিদেশী আদালত এর রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে; তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত—”
চলুন, এটাকে সহজ করে বুঝিঃ
“কোন বিদেশী আদালত কোন বিষয়ে বিচার করলে…”: এখানে ‘বিদেশী আদালত’ বলতে বাংলাদেশের সীমানার বাইরে অবস্থিত কোনো আদালতের কথা বলা হচ্ছে।
“...তা একই পক্ষসমূহ বা তাদের সূত্রে এক বা একের অধিক স্বত্ব দাবিকারীর মধ্যে একই বিষয় সম্পর্কিত মোকদ্দমা হলে…”: এই শর্তটি ধারা ১০ (মোকদ্দমা স্থগিতকরণ) এবং ধারা ১১ (রেস জুডিকাটা) এর মতোই। অর্থাৎ, বিদেশী আদালতে যে মোকদ্দমাটি বিচার করা হয়েছে, সেই মোকদ্দমার পক্ষগণ এবং বিচার্য বিষয়টি বাংলাদেশের আদালতে দায়েরকৃত নতুন মোকদ্দমার পক্ষগণ ও বিচার্য বিষয়ের সাথে একই বা সদৃশ হতে হবে।
“...বিদেশী আদালত এর রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে…”: যদি উপরের শর্তগুলো পূরণ হয়, তাহলে বিদেশী আদালতের রায়কে বাংলাদেশে চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া হবে। এর ফলে, সেই একই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে মোকদ্দমা করা যাবে না।
“তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত—”: এই অংশটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর পরে কিছু সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে, যখন বিদেশী আদালতের রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না, অর্থাৎ সেই রায়কে বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জ করা যাবে বা একই বিষয় নিয়ে নতুন মোকদ্দমা করা যাবে।
কখন বিদেশী রায় চূড়ান্ত নয় (ব্যতিক্রমসমূহ):
(এ) যেক্ষেত্রে উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক রায় ঘোষিত হয় নাই;
এর মানে হলো, বিদেশী আদালত যে রায় দিয়েছে, সেই মোকদ্দমাটি বিচার করার জন্য সেই আদালতের সঠিক এখতিয়ার (Jurisdiction) ছিল না। যদি কোনো আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে রায় দেয়, তবে সেই রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে না।
(বি) মোকদ্দমার গুণাগুণ এর ভিত্তিতে রায় দেওয়া না হলে;
যদি বিদেশী আদালতের রায় মোকদ্দমার গুণাগুণের (on the merits) ভিত্তিতে না দেওয়া হয়, বরং শুধুমাত্র কোনো প্রক্রিয়াগত ত্রুটি বা অন্য কোনো টেকনিক্যাল কারণে রায় দেওয়া হয় (যেমনঃ সময়ের অভাবে বা পক্ষ হাজির না হওয়ায়), তাহলে সেই রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত হবে না। রায়টি অবশ্যই মোকদ্দমার মূল বিষয়বস্তু বিচার করে হতে হবে।
(সি) আন্তর্জাতিক আইনের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা কিংবা মোকদ্দমাটির প্রতি প্রযোজ্য বাংলাদেশের আইন অস্বীকার করে রায় প্রদান করা হয়েছে বলে কার্যক্রম হতে প্রতীয়মান হলে;
যদি বিদেশী আদালত আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা করে রায় দেয়, অথবা মোকদ্দমার সাথে বাংলাদেশের যে আইনটি প্রযোজ্য হওয়া উচিত ছিল, সেই আইনটিকে উপেক্ষা বা অস্বীকার করে রায় দেয়, তাহলে সেই রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত হবে না। এই ব্যতিক্রমটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাংলাদেশের আইনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে।
(ডি) যে রায় আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে, তাতে অনুসৃত পদ্ধতি ও কার্যক্রম ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হলে;
যদি বিদেশী আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়া ন্যায্য বিচার (Natural Justice) এর মূলনীতিগুলো অনুসরণ না করে (যেমনঃ পক্ষদের কথা বলার সুযোগ না দেওয়া, পর্যাপ্ত নোটিশ না দেওয়া), তাহলে সেই রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত হবে না। এটি মূলত বিচার প্রক্রিয়ার সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
(ই) প্রতারণা মারফত রায় লাভ করা হলে;
যদি বিদেশী আদালতের রায় প্রতারণা (Fraud) করে পাওয়া যায়, অর্থাৎ কোনো পক্ষ আদালতকে বিভ্রান্ত করে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে রায় লাভ করে, তাহলে সেই রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না।
(এফ) বাংলাদেশে প্রচলিত কোন আইনের বিরোধী কোন দাবি রায়ে বজায় রাখা হলে;
যদি বিদেশী আদালতের রায় এমন কোনো দাবিকে সমর্থন করে যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের (Law in force in Bangladesh) পরিপন্থী বা বিরোধী, তাহলে সেই রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত হবে না। এটি নিশ্চিত করে যে, বিদেশী রায় বাংলাদেশের জননীতি ও মৌলিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না।
ধারা ১৩ দেওয়ানি কার্যবিধির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা যা আন্তর্জাতিক আইনি সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি একদিকে বিদেশী আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সেগুলোকে সাধারণত চূড়ান্ত বলে গণ্য করে, অন্যদিকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার মৌলিক নীতি, ন্যায্য বিচার এবং আইনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যতিক্রমও নির্ধারণ করে। এর ফলে, বাংলাদেশের কোনো আদালত যেন অন্যায়, ত্রুটিপূর্ণ বা বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী কোনো বিদেশী রায় কার্যকর করতে বাধ্য না হয়, তা নিশ্চিত করা হয়। এই ধারাটি আন্তর্জাতিক দেওয়ানি আইন এবং বিভিন্ন দেশের বিচারিক সিদ্ধান্তের পারস্পরিক প্রভাব সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয়।
বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কোর্স দেখতে এখানে ক্লিক করুন!
আয়কর ও ভ্যাট ট্রেনিং এর কোর্স দেখতে এখানে ক্লিক করুন!

লক্ষ্য করুনঃ আইনের শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ পাঠকরা প্রায়ই The Code of Civil Procedure, 1908-কে বিভিন্নভাবে যেমনঃ CPC 1908, Code of Civil Procedure 1908, The Civil Procedure Code 1908, অথবা Civil Procedure Code 1908 নামে খোঁজেন। এই ভিন্ন নামগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে খোঁজার সময় ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো সম্ভব। এছাড়াও, অনেকে Laws of Bangladesh ওয়েসাইটে প্রবেশ করে এই আইনটি খোঁজ করেন।