দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮
(১৯০৮ সালের ৫নং আইন)
দায়িত্ব অব্যাহতি (Disclaimer): এটি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণমূলক উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে প্রদত্ত সকল তথ্য, দৃষ্টান্ত ও উপাত্ত বিজ্ঞ আইনজীবীদের পেশাগত পরামর্শের বিকল্প নয়।
ধারার ইংরেজী ভার্সনঃ
Section 14. Presumption as to foreign judgments:
The Court shall presume, upon the production of any document purporting to be a certified copy of a foreign judgment, that such judgment was pronounced by a Court of competent jurisdiction, unless the contrary appears on the record; but such presumption may be displaced by proving want of jurisdiction.
The Court shall presume, upon the production of any document purporting to be a certified copy of a foreign judgment, that such judgment was pronounced by a Court of competent jurisdiction, unless the contrary appears on the record; but such presumption may be displaced by proving want of jurisdiction.
ধারার বাংলা ভার্সনঃ
ধারা ১৪। বিদেশী রায় সম্পর্কে অনুমানঃ
কোন বিদেশী রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি বলিয়া কথিত কোন দলিল দাখিল করিলে আদালত অনুমান করিবে যে, উক্ত রায় উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক ঘোষিত হইয়াছে, যদি না নথিপত্রে ইহার বিপরীত প্রতীয়মান হয়; কিন্তু এখতিয়ারের অভাব প্রমাণ করিয়া এইরূপ অনুমান খণ্ডন করা যাইতে পারে।
কোন বিদেশী রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি বলিয়া কথিত কোন দলিল দাখিল করিলে আদালত অনুমান করিবে যে, উক্ত রায় উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক ঘোষিত হইয়াছে, যদি না নথিপত্রে ইহার বিপরীত প্রতীয়মান হয়; কিন্তু এখতিয়ারের অভাব প্রমাণ করিয়া এইরূপ অনুমান খণ্ডন করা যাইতে পারে।
বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা
ধারা ১৪ হলো ধারা ১৩ এর একটি পরিপূরক ধারা, যা বিদেশী রায় সম্পর্কে একটি অনুমান (Presumption) নিয়ে কাজ করে। সহজ কথায়, এই ধারাটি বলে যে, যখন কোনো বিদেশী আদালতের রায়ের একটি সত্যায়িত কপি (certified copy) আদালতে জমা দেওয়া হয়, তখন আদালত প্রাথমিকভাবে ধরে নেবে যে, সেই রায়টি একটি সঠিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত দিয়েছে। তবে, এই অনুমানকে মিথ্যা প্রমাণ করার সুযোগও আছে।ধারাটির মূল অংশটি হলোঃ
“কোন বিদেশী রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি বলিয়া কথিত কোন দলিল দাখিল করিলে আদালত অনুমান করিবে যে, উক্ত রায় উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক ঘোষিত হইয়াছে, যদি না নথিপত্রে ইহার বিপরীত প্রতীয়মান হয়; কিন্তু এখতিয়ারের অভাব প্রমাণ করিয়া এইরূপ অনুমান খণ্ডন করা যাইতে পারে।”
চলুন, এটাকে সহজ করে বুঝিঃ
“কোন বিদেশী রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি বলিয়া কথিত কোন দলিল দাখিল করিলে…”: এর মানে হলো, যখন বাংলাদেশের কোনো আদালতে একটি বিদেশী আদালতের রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি (অর্থাৎ, মূল রায়ের একটি সরকারিভাবে অনুমোদিত ও সিলমোহরযুক্ত কপি) দাখিল করা হয়। “বলিয়া কথিত কোন দলিল” বলতে বোঝায় যে, এই ডকুমেন্টটিকে বিদেশী রায়ের সত্যায়িত কপি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
“...আদালত অনুমান করিবে যে, উক্ত রায় উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত কর্তৃক ঘোষিত হইয়াছে…”: এটিই হলো এই ধারার মূল কথা। আদালত স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি অনুমান (Presumption) তৈরি করবে। এই অনুমানটি হলো যে, যে বিদেশী আদালত এই রায়টি দিয়েছে, সেই আদালতের সেই মোকদ্দমাটি বিচার করার সঠিক ক্ষমতা বা এখতিয়ার (Jurisdiction) ছিল। এই অনুমানটি আইনের একটি সুবিধাজনক নিয়ম, কারণ এটি প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদেশী আদালতের এখতিয়ার আলাদাভাবে প্রমাণের বোঝা কমিয়ে দেয়।
“...যদি না নথিপত্রে ইহার বিপরীত প্রতীয়মান হয়…”: তবে, এই অনুমানটি সর্বদা অপরিবর্তনীয় নয়। যদি আদালতের সামনে থাকা নথিপত্র বা রেকর্ডেই দেখা যায় যে, বিদেশী আদালতের আসলে সেই মোকদ্দমাটি বিচার করার এখতিয়ার ছিল না, তাহলে আদালত সেই অনুমান করবে না। অর্থাৎ, প্রমাণ না থাকলে অনুমান, প্রমাণ থাকলে প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত।
“...কিন্তু এখতিয়ারের অভাব প্রমাণ করিয়া এইরূপ অনুমান খণ্ডন করা যাইতে পারে।”: এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। যদি নথিপত্রে সরাসরি এখতিয়ারের অভাব দেখা নাও যায়, তবুও যে পক্ষ বিদেশী রায়কে চ্যালেঞ্জ করতে চায়, সেই পক্ষ সক্রিয়ভাবে প্রমাণ করতে হবে যে, বিদেশী আদালতের রায় দেওয়ার মতো যথাযথ এখতিয়ার ছিল না। যদি সফলভাবে এই ‘এখতিয়ারের অভাব’ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আদালত আর অনুমান করবে না যে রায়টি উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত দিয়েছে। ফলস্বরূপ, ধারা ১৩(এ) অনুযায়ী সেই বিদেশী রায় বাংলাদেশে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না।
কেন এই ধারাটি গুরুত্বপূর্ণ?
প্রমাণের বোঝা কমানো (Relief from burden of proof): এটি বিচার প্রক্রিয়ায় একটি সুবিধা দেয়। প্রাথমিকভাবে, যে পক্ষ বিদেশী রায় বাংলাদেশে কার্যকর করতে চায়, তাকে বিদেশী আদালতের এখতিয়ার আলাদা করে প্রমাণ করতে হয় না। আদালত নিজেই এই অনুমান করে নেয়।
দক্ষতা বৃদ্ধিঃ এটি আদালতের সময় বাঁচায় এবং বিচার প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করে।
ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণঃ একই সাথে, এটি যে কোনো পক্ষকে অন্যায়ভাবে চাপানো বিদেশী রায় থেকে নিজেকের রক্ষা করার সুযোগ দেয়, যদি প্রমাণ করতে পারে যে রায়দানকারী আদালতের উপযুক্ত এখতিয়ার ছিল না। এটি নিশ্চিত করে যে, বিচার ব্যবস্থা ন্যায়ের পথে থাকে।
সংক্ষেপে, ধারা ১৪ হলো একটি ‘অনুমানের নীতি’। এটি বলে যে, একটি সত্যায়িত বিদেশী রায়ের কপি দেখলে আদালত ধরে নেবে যে রায়টি সঠিক আদালত দিয়েছে, যতক্ষণ না এর উল্টো প্রমাণ হয়। তবে, এই অনুমানকে মিথ্যা প্রমাণ করার সুযোগ সবসময় থাকে, বিশেষ করে যদি প্রমাণ করা যায় যে বিদেশী আদালতের সেই মোকদ্দমায় রায় দেওয়ার মতো কোনো এখতিয়ার ছিল না।
💳 আমাদের সাথে যোগাযোগঃ
লক্ষ্য করুনঃ আইনের শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ পাঠকরা প্রায়ই The Code of Civil Procedure, 1908-কে বিভিন্নভাবে যেমনঃ CPC 1908, Code of Civil Procedure 1908, The Civil Procedure Code 1908, অথবা Civil Procedure Code 1908 নামে খোঁজেন। এই ভিন্ন নামগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে খোঁজার সময় ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো সম্ভব। এছাড়াও, অনেকে Laws of Bangladesh ওয়েসাইটে প্রবেশ করে এই আইনটি খোঁজ করেন।