Tuesday , April 16 2024

যৌতুক দাবি করলে কি করবেন? (পর্ব-০৪)

নালিশ আমলে গ্রহণঃ আমল গ্রহণকারী আদালতে কোর্ট ফি দিয়ে বিচারের প্রার্থনা করলে আদালত নালিশদাতাকে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারায় হলফপূর্বক শপথ নিয়ে নালিশের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তা নালিশের ১ম পৃষ্ঠার উল্টা পীঠে লিপিবদ্ধ করে প্রয়োজনে তার উপস্থাপিত সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ১ঌ০(১)(১) উপধারা মতে অপরাধটি আমলে নিতে পারেন। তবে অপরাধ আমলে গ্রহণকালে বা নালিশ তদন্তের জন্য প্রেরণকালে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০-২০১ ধারায় বিধান অনুসারে আমল গ্রহণকারী আদালতের করণীয় নিম্নরূপঃ

  • নালিশকারী বা উপস্থিত সাক্ষীদের মধ্যে যাদের সাক্ষ্য উপযুক্ত মনে করবেন তাদের শপথ পূর্বক জবানবন্দি গ্রহন করবেন;
  • গৃহীত জবানবন্দির সারাংশ আদেশনামায় লিপিবদ্ধ করবেন;
  • নালিশকারী সরকারী কর্মচারী হিসেবে সরকারী দায়িত্বের অংশ হিসাবে নালিশ দায়ের করলে তাঁর জবানবন্দি গ্রহণের প্রয়োজন নেই;
  • নালিশদাতাকে পরীক্ষা করার মূল উদ্দেশ্যে হলো নালিশটি সত্য কিনা, মিথ্যা কিনা, অহেতুক কিনা, ফৌজদারী দায়যুক্ত কিনা তা যাচাই করা;
  • নালিশদাতার জবানবন্দি গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত নালিশটি ফৌজদারী ফৌঃ কাঃ বিঃ ২০১(১) ধারা অনুযায়ী বিচারিক তদন্ত বা অনুসন্ধানের জন্য প্রেরণ করা যাবে না; (তথ্যসূত্র: ২৮ ডিএলআর ২৮ঌ)
  • ফৌজদারী কার্যবিধি ২০০ ধারার অধীনে নালিশদাতাকে পরীক্ষা করা না হয়ে থাকলে তা মারাত্মক অনিয়ম বলে গণ্য হবে। তবে এর ফলে মামলার কার্যক্রম বাতিল হয়ে যাবে না, তবে দেখতে হবে যে এর ফলে আপত্তিকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কিনা; (তথ্যসূত্র: ২ ডিএলআর ১৪১)
  • ফৌঃ কাঃ বিঃ ২০০ ধারায় নালিশদাতাকে পরীক্ষা না করা অনিয়ম হিসেবে গণ্য হবে তবে এরূপ অনিয়ম ফৌঃ কাঃ বিঃ ৫৩৭ ধারার বিধান অনুসারে সংশোধনযোগ্য; (তথ্যসূত্র:২১ ডিএলআর ২৮৪ ডব্লিউপি)
  • নালিশ আমলে নেয়ার ক্ষমতা না থাকলে তা উপযুক্ত আদালতে পেশ করার মন্তব্যসহ ফেরত দিতে হবে;
  • নিজে নালিশটি তদন্ত করতে পারেন বা অধস্তন কোন ম্যাজিষ্ট্রেটকে বা অন্য কোন ব্যক্তিকে তদন্ত (inquiry) করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আদেশ দিতে পারেন;
  • থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বা অপর কোন ব্যক্তিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আদেশ দিতে পারেন;
  • অপরাধ গুরুতর প্রকৃতির হলে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবরে নালিশটি পাঠিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিতে পারেন;
  • ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক প্রেরিত এরূপ নালিশকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজাহার হিসেবে গণ্য করে দ্রুত এফ.আই.আর করবেন। উল্লেখ যে, ইয়াকুব আলী বনাম রাষ্ট্র মোকদ্দমায় ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৫৬(৩) ধারার প্রসঙ্গে ৪৭ ডিএলআর ঌ৪ এ বলা হয়েছে – There is nothing wrong in procedure adopted by the Magistrate directing the Police to hold investigation treating the petition of complaint as a First Information Report.

  • যেক্ষেত্রে কোর্ট order দেয় সেক্ষেত্রে নালিশের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পুলিশের নিকট পাঠানো হয়ে থাকলে তার রিপোর্ট আসার পূর্বে মামলাটি আমলে নেয়া বৈধ হবে না; (তথ্যসূত্র: ৩৫ ডিএলআর ২০৭)
  • পুলিশ রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজী দেয়া হলে নারাজীটি শুনানীক্রমে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ রিপোর্টের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়া যাবে না; (তথ্যসূত্র: ১৭ ডিএলআর ৪২)
  • পুলিশকে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয়া হলে তার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; (তথ্যসূত্র: ঌ ডিএলআর ৬ঌ)
  • মামলার প্রসেস (সমন, ওয়ারেন্ট, হুলিয়া) ইস্যুর পর নালিশ তদন্ত করতে দেয়ার আর কোন সুযোগ নেই;
  • আদালত কাউকে নালিশ তদন্তের আদেশ দিলে তিনি তদন্তে অবহেলা করলে বা অনীহা করলে তা আদালত অবমাননার সামিল হবে এবং আদালত অবমাননার দোষে তিনি দোষী হবেন;
  • আদালতের আদেশে যিনি নালিশ তদন্ত করবেন তিনি যদি ম্যাজিষ্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার না হন তবে তিনি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০২ (২) ধারা অনুসারে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের ক্ষমতা ব্যতীত কোন থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের যাবতীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

<<< ৩য় পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন ৫ম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন >>>